চীনের সামরিক মহড়া: ট্রাম্পের উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ বাণিজ্য নীতির বিপদ স্পষ্ট

ছবি সংগৃহীত

 

অনলাইন ডেস্ক :  চীনের সামরিক প্রদর্শনীর বিশাল মহড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ বাণিজ্য নীতির বিপদগুলো তুলে ধরেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এই কুচকাওয়াজ কেবল চীনের সামরিক সক্ষমতার প্রদর্শন ছিল না, এটি ছিল বিশ্বকে দেওয়া এক জোরালো বার্তা। তারা যেনো বলতে চাইলো, বিশ্ব মঞ্চে ক্ষমতার একটি নতুন কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে।

 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেইজিংয়ের এই কুচকাওয়াজ খুব, খুব চিত্তাকর্ষক বলে অভিহিত করলেও, তার নিজস্ব অর্থনৈতিক নীতিগুলো যে বৈশ্বিক জোটগুলোকে নতুন করে সাজাচ্ছে, তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ দৃষ্টিভঙ্গি এবং বাণিজ্য নীতিগুলো রাশিয়া, চীন ও ভারতের মতো দেশগুলোকে একে অপরের কাছাকাছি নিয়ে আসছে। সম্প্রতি তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত এক অর্থনৈতিক সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সেই বাস্তবতারই এক শক্তিশালী উদাহরণ।

ট্রাম্পের শুল্ক নীতিগুলো এই দেশগুলোকে কঠিন আঘাত করেছে, যার ফলস্বরূপ তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। প্রাক্তন মার্কিন কর্মকর্তা রিচার্ড উইল্কির মতে, ট্রাম্পের এই নীতিগুলো বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিন্যাসকে এলোমেলো করে দিয়েছে। যদিও ট্রাম্প মনে করেন শুল্ক আরোপের মাধ্যমে আমেরিকান শিল্পকে রক্ষা করা এবং সরকারি রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব, কিন্তু এর ফলে যে কূটনৈতিক মূল্য দিতে হচ্ছে, তা তিনি আপাতত উপেক্ষা করছেন বলে মনে হচ্ছে।

 

এদিকে, ট্রাম্পের উচ্চাকাঙ্ক্ষী বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জও বাড়ছে। সম্প্রতি একটি আপিল আদালত রায় দিয়েছে যে ট্রাম্পের আরোপিত অনেক শুল্কই আইনগতভাবে ত্রুটিপূর্ণ। ট্রাম্প এই রায়কে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করার কথা বলেছেন, কিন্তু সেখানেও তার বিজয় নিশ্চিত নয়। কারণ, আদালত প্রায়শই এমন নীতিগুলোর বিরোধিতা করে যা কংগ্রেসের সুস্পষ্ট অনুমোদন ছাড়াই প্রেসিডেন্ট এককভাবে চাপিয়ে দেন।

 

বেইজিংয়ের বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজ এবং বিশ্বজুড়ে ভূ-রাজনৈতিক জোটের এই পরিবর্তন ট্রাম্পের জন্য এক বড় ঝুঁকি তৈরি করেছে। তার এই নীতিগুলো দ্বিতীয় একটি আমেরিকান স্বর্ণযুগের প্রতিশ্রুতি দিলেও চীনের কুচকাওয়াজ বা মার্কিন আদালতের রায়—সবকিছুতেই বিপদ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এটি এখন দেখার বিষয়, ট্রাম্প তার উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ নীতি নিয়ে কতটা সফল হতে পারেন এবং তার নেওয়া পদক্ষেপগুলো শেষ পর্যন্ত আমেরিকার জন্য পুরস্কৃত হয়, নাকি কেবল ঝুঁকিই বাড়ায়। সূত্র: বিবিসি

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» চোরদের হাতে নয়, দেশের চাবি তুলে দিতে চাই সৎ চৌকিদারদের হাতে : ডা. শফিকুর

» অতীতের ইতিহাসের জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চান : জামায়াতকে ফারুক

» অন্তর্বর্তী সরকার শ্রমিকবান্ধব না হলে আর কে হবে: উপ-প্রেস সচিব

» ফোনে যেসব নম্বর থেকে কল পেলেই বুঝবেন জিমেইল হ্যাকের চেষ্টা চলছে

» ‘নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে দেড় লাখ পুলিশকে দেয়া হবে বিশেষ প্রশিক্ষণ’

» মেসিদের সঙ্গে লাতিন অঞ্চলে আরও যাদের বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত

» নারীসহ তিন মাদক কারবারি গ্রেফতার

» পাঁচ মামলার আসামি গ্রেফতার

» শাহরুখের ‘কিং’ ছবির লুক ফাঁস

» হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্রীকরণে সেনাবাহিনীর পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করবে লেবানন

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

চীনের সামরিক মহড়া: ট্রাম্পের উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ বাণিজ্য নীতির বিপদ স্পষ্ট

ছবি সংগৃহীত

 

অনলাইন ডেস্ক :  চীনের সামরিক প্রদর্শনীর বিশাল মহড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ বাণিজ্য নীতির বিপদগুলো তুলে ধরেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এই কুচকাওয়াজ কেবল চীনের সামরিক সক্ষমতার প্রদর্শন ছিল না, এটি ছিল বিশ্বকে দেওয়া এক জোরালো বার্তা। তারা যেনো বলতে চাইলো, বিশ্ব মঞ্চে ক্ষমতার একটি নতুন কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে।

 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেইজিংয়ের এই কুচকাওয়াজ খুব, খুব চিত্তাকর্ষক বলে অভিহিত করলেও, তার নিজস্ব অর্থনৈতিক নীতিগুলো যে বৈশ্বিক জোটগুলোকে নতুন করে সাজাচ্ছে, তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ দৃষ্টিভঙ্গি এবং বাণিজ্য নীতিগুলো রাশিয়া, চীন ও ভারতের মতো দেশগুলোকে একে অপরের কাছাকাছি নিয়ে আসছে। সম্প্রতি তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত এক অর্থনৈতিক সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সেই বাস্তবতারই এক শক্তিশালী উদাহরণ।

ট্রাম্পের শুল্ক নীতিগুলো এই দেশগুলোকে কঠিন আঘাত করেছে, যার ফলস্বরূপ তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। প্রাক্তন মার্কিন কর্মকর্তা রিচার্ড উইল্কির মতে, ট্রাম্পের এই নীতিগুলো বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিন্যাসকে এলোমেলো করে দিয়েছে। যদিও ট্রাম্প মনে করেন শুল্ক আরোপের মাধ্যমে আমেরিকান শিল্পকে রক্ষা করা এবং সরকারি রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব, কিন্তু এর ফলে যে কূটনৈতিক মূল্য দিতে হচ্ছে, তা তিনি আপাতত উপেক্ষা করছেন বলে মনে হচ্ছে।

 

এদিকে, ট্রাম্পের উচ্চাকাঙ্ক্ষী বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জও বাড়ছে। সম্প্রতি একটি আপিল আদালত রায় দিয়েছে যে ট্রাম্পের আরোপিত অনেক শুল্কই আইনগতভাবে ত্রুটিপূর্ণ। ট্রাম্প এই রায়কে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করার কথা বলেছেন, কিন্তু সেখানেও তার বিজয় নিশ্চিত নয়। কারণ, আদালত প্রায়শই এমন নীতিগুলোর বিরোধিতা করে যা কংগ্রেসের সুস্পষ্ট অনুমোদন ছাড়াই প্রেসিডেন্ট এককভাবে চাপিয়ে দেন।

 

বেইজিংয়ের বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজ এবং বিশ্বজুড়ে ভূ-রাজনৈতিক জোটের এই পরিবর্তন ট্রাম্পের জন্য এক বড় ঝুঁকি তৈরি করেছে। তার এই নীতিগুলো দ্বিতীয় একটি আমেরিকান স্বর্ণযুগের প্রতিশ্রুতি দিলেও চীনের কুচকাওয়াজ বা মার্কিন আদালতের রায়—সবকিছুতেই বিপদ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এটি এখন দেখার বিষয়, ট্রাম্প তার উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ নীতি নিয়ে কতটা সফল হতে পারেন এবং তার নেওয়া পদক্ষেপগুলো শেষ পর্যন্ত আমেরিকার জন্য পুরস্কৃত হয়, নাকি কেবল ঝুঁকিই বাড়ায়। সূত্র: বিবিসি

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com